ট্রাম্পের দাবি, প্রধানমন্ত্রী মোদী তাকে আশ্বস্ত করেছেন "ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না" যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না। ট্রাম্প এই পদক্ষেপকে “মস্কোকে অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার বড় পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি খুশি ছিলাম না যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। আজ প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে তারা আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না। এটা খুব বড় পদক্ষেপ। এখন আমাদের লক্ষ্য চীনকেও একই কাজ করানো।” ট্রাম্পের মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়ার তেল রপ্তানি কমাতে বৈশ্বিক চাপ বৃদ্ধি করেছে।
রয়টার্সের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জ্বালানি আমদানিকারক দেশ, এবং ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া তার অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী হয়ে ওঠে। ২০২২ সালের শুরুতে ভারত যেখানে দৈনিক ৬০,০০০ ব্যারেল রাশিয়ান তেল কিনত, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১.৬ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিনে, যা ভারতের মোট আমদানির প্রায় ৪০ শতাংশ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করতে চাইছে ভারত। তাই ট্রাম্পের সঙ্গে এই আলোচনাকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। এনডিটিভি ও দ্য হিন্দু জানিয়েছে, দিল্লি থেকে এখনো কোনো সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। এক সিনিয়র ভারতীয় কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, “ভারত আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে ভারসাম্য রক্ষা করে চলে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তেল আমদানি বন্ধ করব না, তবে নতুন চুক্তি পর্যালোচনা চলছে।”
যদি ভারত সত্যিই রাশিয়ান তেল আমদানি বন্ধ করে, তবে এটি হবে বিশ্ব জ্বালানি কূটনীতির এক বড় মোড়। রাশিয়ার অর্থনীতির প্রায় ৩০ শতাংশই তেল রপ্তানি নির্ভর, আর ভারতের মতো বড় ক্রেতা হারানো মানে মস্কোর রাজস্বে বিশাল ঘাটতি। আবার ভারতের জন্যও তা বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ রাশিয়ান তেল পশ্চিমা বাজারের তুলনায় গড়ে ২০–২৫ শতাংশ সস্তা।
“তাৎক্ষণিক নয়, ধীরে ধীরে বন্ধ” ট্রাম্প বলেন, ভারত তাৎক্ষণিকভাবে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে পারবে না, তবে “এটা একটা প্রক্রিয়া, এবং সেই প্রক্রিয়া খুব শিগগিরই শেষ হবে।” হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে “উচ্চপর্যায়ের সমন্বিত পরিকল্পনা” শুরু হয়েছে, যার মধ্যে বিকল্প সরবরাহকারীদের (যেমন সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র নিজেই) সঙ্গে নতুন তেলচুক্তি আলোচনাও রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘোষণা যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি হবে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম বড় কূটনৈতিক অর্জন—রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার পাশাপাশি ভারত-আমেরিকা সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার ক্ষেত্রে এক “ডাবল সাফল্য”। তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে এই প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকর হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
সূত্র: রয়টার্স, এনডিটিভি, বিবিসি, দ্য হিন্দু

